ঢাকা ০৩:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২০:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুলাই ২০২০ ৫২৩৯ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডেস্ক:

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য ভারত বহুস্তরের কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নয়া দিল্লি। দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে একথা জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, ইকোনমিক টাইমস জানতে পেরেছে, চীনের বাণিজ্যিক সুবিধার ফলে ‘বাজেট ও আমদানি-রফতানিতে ঘাটতি ও ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে’ বাংলাদেশ। ভারত বেশ কয়েকটি কানেক্টিভিটি উদ্যোগ সক্রিয় করতে যাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশ হবে স্থলসীমান্তঘেরা উত্তর-পূর্বের রাজ্য ও অন্যান্য অংশে।

আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি পর্যালোচনাকারী বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, রেল ও মহাসড়কে কানেক্টিভিটি উদ্যোগ জোরদার করা হবে। যা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই ১৯৬৫ সালের আগে রেলসহ যেসব কানেক্টিভিটি সংযোগ ছিল সেগুলো পুনরায় সচল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের বিরোধিতার পরও গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহন পুনরায় চালু হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি রফতানি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশেষ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে লিখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, চীনের সিদ্ধান্তের এক দশক আগেই বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা দিয়েছে ভারত। যা ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বাণিজ্যে ছাড় থেকে ঋণের ক্ষেত্রে ভারতীয় শর্তাবলি বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক।

ওই সূত্র আরও জানায়, ঢাকাকে বাণিজ্যে ছাড় দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখেছে বেইজিং। এই পদক্ষেপ ঢাকাকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে। বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুবিধা নিতে চাইবে।
ইকোনমিক টাইমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। গত দশকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৯২১ কোটি ও ১০৪ কোটি ডলার। এর তুলনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেইজিংয়ের স্বার্থের অনুকূলে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার। বিপরীতে ঢাকা রফতানি করেছে ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের মোট আমদানির এক-চতুর্থাংশ চীন থেকে আসা। গত দুই দশকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৬ গুণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সম্পূর্ণ বিপরীত পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশকে গত আট বছরে ৮০০ কোটি ডলার লাইনস অব ক্রেডিটস (এলওসি) দিয়েছে সড়ক, রেলপথ, নৌপরিবহন ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য। ভারতীয় রেয়াতি ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা বাংলাদেশ। আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, অভ্যন্তরীণ নৌপথের জন্য ড্রেজিং এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণে সহযোগিতা করছে।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকাকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ (এসডিপিএস)। ছাত্রদের আবাসিক হল, শিক্ষা ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও এতিমখানাসহ বাংলাদেশে ৫৫টি এসডিপিএস প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ভারত। এছাড়াও ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা

আপডেট সময় : ১০:২০:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুলাই ২০২০

ডেস্ক:

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য ভারত বহুস্তরের কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নয়া দিল্লি। দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে একথা জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, ইকোনমিক টাইমস জানতে পেরেছে, চীনের বাণিজ্যিক সুবিধার ফলে ‘বাজেট ও আমদানি-রফতানিতে ঘাটতি ও ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে’ বাংলাদেশ। ভারত বেশ কয়েকটি কানেক্টিভিটি উদ্যোগ সক্রিয় করতে যাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশ হবে স্থলসীমান্তঘেরা উত্তর-পূর্বের রাজ্য ও অন্যান্য অংশে।

আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি পর্যালোচনাকারী বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, রেল ও মহাসড়কে কানেক্টিভিটি উদ্যোগ জোরদার করা হবে। যা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই ১৯৬৫ সালের আগে রেলসহ যেসব কানেক্টিভিটি সংযোগ ছিল সেগুলো পুনরায় সচল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের বিরোধিতার পরও গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহন পুনরায় চালু হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি রফতানি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশেষ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে লিখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, চীনের সিদ্ধান্তের এক দশক আগেই বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা দিয়েছে ভারত। যা ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বাণিজ্যে ছাড় থেকে ঋণের ক্ষেত্রে ভারতীয় শর্তাবলি বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক।

ওই সূত্র আরও জানায়, ঢাকাকে বাণিজ্যে ছাড় দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখেছে বেইজিং। এই পদক্ষেপ ঢাকাকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে। বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুবিধা নিতে চাইবে।
ইকোনমিক টাইমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। গত দশকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৯২১ কোটি ও ১০৪ কোটি ডলার। এর তুলনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেইজিংয়ের স্বার্থের অনুকূলে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার। বিপরীতে ঢাকা রফতানি করেছে ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের মোট আমদানির এক-চতুর্থাংশ চীন থেকে আসা। গত দুই দশকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৬ গুণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সম্পূর্ণ বিপরীত পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশকে গত আট বছরে ৮০০ কোটি ডলার লাইনস অব ক্রেডিটস (এলওসি) দিয়েছে সড়ক, রেলপথ, নৌপরিবহন ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য। ভারতীয় রেয়াতি ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা বাংলাদেশ। আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, অভ্যন্তরীণ নৌপথের জন্য ড্রেজিং এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণে সহযোগিতা করছে।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকাকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ (এসডিপিএস)। ছাত্রদের আবাসিক হল, শিক্ষা ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও এতিমখানাসহ বাংলাদেশে ৫৫টি এসডিপিএস প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ভারত। এছাড়াও ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।