ঢাকা ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের ঘটনা, বিএনপি নেতার নেতৃত্বে দফারফার ভিডিও ভাইরাল

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৯:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মাদরাসায় যাওয়ার পথে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি মীমাংসার নামে অভিযুক্ত শাহরুখকে (১৮) বাঁচাতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সালিস বৈঠক ডেকে ২০ হাজার টাকায় মিটমাটের সিন্ধান্ত দেয়। ইতিমধ্যে এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার সালিসদারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

আরো পড়ুন.. শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, অভিযুক্ত সেই কিশোরকে পুলিশে দিল পরিবার

গত শনিবার (১ মার্চ) বিকেলে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজি বাড়ির পিছনে এই সালিসী বৈঠক বসে। এর আগে, একই দিন ভোরে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ মীমাংসা মেনে নেয়নি ওই শিশুর মা।

 

অভিযুক্ত মো.শাহরুখ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ মিয়ার নতুন বাড়ির নুর নবীর ছেলে।

 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সালিসের শুরুতে অভিযুক্ত যুবকের এক স্বজন সালিসদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যাই বলেন তাই মানি। তখন পাল্টা আরেকজন বলে মানেন বলেইতো স্বাক্ষর দিয়েছেন। এবার সালিসে উপস্থিত অনেকেই মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিসদার মো.আলী ওরফে জনিকে কথা বলতে বলেন। জনি বলেন, শাহরুখ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় সে অভিযুক্ত। সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে শাহরুখের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০ বেত্রাঘাত দিবেন অভিভাবকরা। এ বিচার মানলে স্ট্যাম্প সালিসদার আলমগীরের কাছে থাকবে, বিচার না মানলে স্ট্যাম্প নিয়ে যান। তখন বিচারক আলমগীর বলেন স্ট্যাম দেওয়া হবেনা। এরপর সালিসদার অভিযুক্ত ছেলের বাবাকে তার ছেলেকে বেত্রাঘাত দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, বেত্রাঘাতের বিষয়টি এখন নেই, তবে মিডেলিস্ট দেশে আছে। এ সময় জরিমানার টাকা একদিন পর দেওয়ার কথা বলেন অভিযুক্তের বাবা। এরপর অভিযুক্ত ছেলের মা এসে ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করলে সে চলে যায়।

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ভোরে মাদরাসায় আরবি পড়ার জন্য যাওয়ার পথে শাহরুখ ভিকটিমকে রাস্তা থেকে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই সময় এক পথচারী দেখে ফেললে সাহরুখ পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনদের মাধ্যমে সালিশী বৈঠক বসে আপস-মীমাংসার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেওয়া হয়। কিন্তু নির্যাতিত শিশুর মা সঠিক বিচারের দাবিতে স্থানীয় মীমাংসাতে রাজি হননি। ঘটনার একদিন পর রোববার ২ মার্চ এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিশদার মো.আলী ওরফে জনি বলেন, সালিশদার বেশির ভাগ বিএনপি করে। এ ছাড়া বাহার কন্ট্রাক্টর মুছাপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও নয়ন আওয়ামী লীগ সমর্থন করে। সাসিলদার জসিম, নয়ন,বাহার কন্ট্রাক্টর, সিকদার বাড়ির সাইফুল,দুলাল,হারুনসহ নির্যাতিত শিশুর মা আমাকে ডেকে সালিশে নেয়। ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির, শিশুর মা এসে কান্নাকাটি করায় আমি গিয়েছি। তবে আমার যাওয়া ঠিক হয়নি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সালিশের ভিডিওটি ভাইরাল করে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করতে চাচ্ছে।

 

জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, সালিশের ভিডিওটি দেখেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় একজনকে আসামি করে মামলা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে, ভুক্তভোগী শিশুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক

শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের ঘটনা, বিএনপি নেতার নেতৃত্বে দফারফার ভিডিও ভাইরাল

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মাদরাসায় যাওয়ার পথে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি মীমাংসার নামে অভিযুক্ত শাহরুখকে (১৮) বাঁচাতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সালিস বৈঠক ডেকে ২০ হাজার টাকায় মিটমাটের সিন্ধান্ত দেয়। ইতিমধ্যে এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার সালিসদারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

আরো পড়ুন.. শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, অভিযুক্ত সেই কিশোরকে পুলিশে দিল পরিবার

গত শনিবার (১ মার্চ) বিকেলে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজি বাড়ির পিছনে এই সালিসী বৈঠক বসে। এর আগে, একই দিন ভোরে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ মীমাংসা মেনে নেয়নি ওই শিশুর মা।

 

অভিযুক্ত মো.শাহরুখ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ মিয়ার নতুন বাড়ির নুর নবীর ছেলে।

 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সালিসের শুরুতে অভিযুক্ত যুবকের এক স্বজন সালিসদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যাই বলেন তাই মানি। তখন পাল্টা আরেকজন বলে মানেন বলেইতো স্বাক্ষর দিয়েছেন। এবার সালিসে উপস্থিত অনেকেই মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিসদার মো.আলী ওরফে জনিকে কথা বলতে বলেন। জনি বলেন, শাহরুখ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় সে অভিযুক্ত। সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে শাহরুখের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০ বেত্রাঘাত দিবেন অভিভাবকরা। এ বিচার মানলে স্ট্যাম্প সালিসদার আলমগীরের কাছে থাকবে, বিচার না মানলে স্ট্যাম্প নিয়ে যান। তখন বিচারক আলমগীর বলেন স্ট্যাম দেওয়া হবেনা। এরপর সালিসদার অভিযুক্ত ছেলের বাবাকে তার ছেলেকে বেত্রাঘাত দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, বেত্রাঘাতের বিষয়টি এখন নেই, তবে মিডেলিস্ট দেশে আছে। এ সময় জরিমানার টাকা একদিন পর দেওয়ার কথা বলেন অভিযুক্তের বাবা। এরপর অভিযুক্ত ছেলের মা এসে ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করলে সে চলে যায়।

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ভোরে মাদরাসায় আরবি পড়ার জন্য যাওয়ার পথে শাহরুখ ভিকটিমকে রাস্তা থেকে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই সময় এক পথচারী দেখে ফেললে সাহরুখ পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনদের মাধ্যমে সালিশী বৈঠক বসে আপস-মীমাংসার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেওয়া হয়। কিন্তু নির্যাতিত শিশুর মা সঠিক বিচারের দাবিতে স্থানীয় মীমাংসাতে রাজি হননি। ঘটনার একদিন পর রোববার ২ মার্চ এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সালিশদার মো.আলী ওরফে জনি বলেন, সালিশদার বেশির ভাগ বিএনপি করে। এ ছাড়া বাহার কন্ট্রাক্টর মুছাপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও নয়ন আওয়ামী লীগ সমর্থন করে। সাসিলদার জসিম, নয়ন,বাহার কন্ট্রাক্টর, সিকদার বাড়ির সাইফুল,দুলাল,হারুনসহ নির্যাতিত শিশুর মা আমাকে ডেকে সালিশে নেয়। ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির, শিশুর মা এসে কান্নাকাটি করায় আমি গিয়েছি। তবে আমার যাওয়া ঠিক হয়নি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সালিশের ভিডিওটি ভাইরাল করে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করতে চাচ্ছে।

 

জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, সালিশের ভিডিওটি দেখেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় একজনকে আসামি করে মামলা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে, ভুক্তভোগী শিশুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।