নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীল সুবর্ণচর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় বেশ কয়েকটি পুরনো সড়ক সংস্কার কাজে শিডিউলবহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
পাঁচটি রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইটের খোয়া, ইট-বালু ব্যবহার করা হয়েছে। একটি সড়কের পিচ ঢালাইয়ে পুরাতন পাথর, বজুরি ও নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সড়ক গুলো হলো, ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উপজেলার পরিষ্কার বাজার থেকে ছিদ্দিক মেম্বারের দোকান পর্যন্ত ৪হাজার মিটার সড়ক। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোস্তফা এন্ড সন্স। মাঠ পর্যায়ে কাজটি করছে কামরুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদার। ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আটকপালিয়া বাজার থেকে পরিষ্কার বাজার পর্যন্ত ২৩০০ মিটার সড়ক। এ কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টার প্রাইজ। ঠিকাদার মো. গিয়াস উদ্দিন নিজেই কাজটি করছেন। ৮নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আক্তার মিয়ারহাট বাজার থেকে বেড়ি পর্যন্ত ১হাজার ৯শত ২২মিটার সড়ক। কাজটি সম্পন্ন করেছেন নান্টু নামে এক ঠিকাদার। উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের জনতা বাজার থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩হাজার ৫শত মিটার সড়ক। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোস্তফা এন্ড সন্স। মাঠ পর্যায়ে কাজটি করছে ঠিকাদার কামরুল ইসলাম । উপজেলার ভূঞার হাট থেকে জোবায়ের মিয়ার বাজার কৃষি ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২হাজার ২৯মিটার। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজান এন্টার প্রাইজ। ঠিকাদার নিজেই কাজটি করছে।
সরকারের জিওবি মেইনটেনেন্স প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি সুবর্ণচর উপজেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চলছে এইসব নির্মাণকাজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিষ্কার বাজার টু ছিদ্দিক মেম্বারের দোকান পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের শুরুতেই নিম্নমানের ইটের খোয়া, বালু, ও এজেন্টে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়। এরপর পিচ ঢালাইয়ে নিম্নমানের পুরাতন পাথর, বিটুমিন, বজুরি ব্যবহার করে রাত ১টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে পিচ ঢালাইয়ের কাজ চালানো হয়। এ সময় স্থানীয়রা বাঁধা দিলে পরের দিন কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদার। পিচ ঢালাইয়ের শেষে সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে স্থানীয়রা হাত দিয়ে টেনে নতুন কার্পেটিং তুলছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। আটকপালিয়া বাজার থেকে পরিষ্কার বাজার সড়ক সংস্কারে কাজের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এজেন্টে নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করে পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে। স্থানীয় সাংবাদিকরা নিম্নমানের কাজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে কোন প্রতিকার পান নি। বীরদর্পে সিডিউল বহির্ভূত ভাবে কাজ চালিয়েছে ঠিকাদার। উপজেলার ৮নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আক্তার মিয়ারহাট বাজার থেকে বেড়ি পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের শুরুতেই নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া, বালু ব্যবহার করা হয়। নিম্নমানের কাজ নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিল। এতে করেও তিনি কোন প্রতিকার পান নি বলে অভিযোগ করে বলেন, সর্বশেষ ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করে।
জনতা বাজার থেকে বাংলা বাজার এবং ভূঞারহাট থেকে কৃষি ইনস্টিটিউট সড়কের সংষ্কারের শুরুতেই নিম্নমানের ইট,ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়। জনতা বাজার থেকে বাংলা বাজার সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ড্যাম্পিং শেষে পিচ ঢালাই চলছে। ভূঞারহাট থেকে কৃষি ইনস্টিটিউট সড়কের নিম্নমানের কাজ চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিডিউলের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো পাঁচটি সড়কে নিম্নমানের কাজ করছেন ঠিকাদার। কাজের শুরু থেকেই তদারকি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে এসব অনিয়ম করে চলছে। এজেন্টে নিম্নমানের ইট,ইটের খোয়া, নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এতে একাধিক স্থানে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়কের কাজে বাধা দেন। তারপর এলাকাবাসী সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগকে মৌখিকভাবে জানিয়েও ফল পাননি। এরপর নিম্নমানের পাথর ও বজুরি দিয়ে ৩টি সড়কে কাপের্টিং করা হয়েছে। বর্তমানে ২টি সড়ক পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন, নির্মাণের একদিন পর হাত দিয়ে টানলে পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। সামনে বর্ষায় সব উঠে যাবে। এত খারাপ রাস্তা করার কী দরকার? স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রকৌশলী মো.জালাল ও সহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল বারীর যোগসাজশে সুবর্ণচর উপজেলায় বেজায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। স্থানীয়রা নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলে ঠিকাদাররা চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখান।
সরজমিন দেখা গেছে, সড়কে নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে যেনতেন ভাবে কাজ করা হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকরা বলছেন, ঠিকাদার যে রকম ইট-বালু দিচ্ছেন, তা দিয়েই তাদের রাস্তা নির্মাণ করতে হচ্ছে। একাধিক শ্রমিক নিম্নমানের ইট ও ইটের খোয়া ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকারও করেন। এ সময় স্থানীয়রা তদারকি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন, উচ্চপর্যায় থেকে সুবর্ণচর উপজেলার সব ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নোয়াখালীর আওতায় বাস্তবায়িত কাজগুলো সঠিকভাবে অন্তত একবার তদন্ত করা হোক। তাহলে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে। কারণ তদারকি প্রতিষ্ঠানের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারি শিডিউল অনুযায়ী উন্নয়ন কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কারণ এর ঘাটে ঘাটে অনেক অনিয়মের গান আছে। এ চারটি সড়কের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীকে তথ্য দিতে তালবাহানা করে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান।
নিম্নমানের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার কামরুল ইসলাম শিফটন, নান্টু, গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেন, তারা সিডিউল অনুযায়ী কাজ করেছে। ঠিকাদার কামরুল ইসলাম বলেন, আমার কাজে কিছু খারাপ পাথর গিয়েছে। অফিস বলছে এসব পাথর দিয়ে কাজ করা যাবে না। এর বাহিরে কোন অনিয়ম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। ঠিকাদার শিফটন বলেন, তিনি খারাপ কাজ করার মত ঠিকাদার নয়।
সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী মো. জালাল নিম্নমানের কাজে তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, রাতের অন্ধকারে পুরাতন সামগ্রী দিয়ে সড়কের পিচ ঢালাই করা হয়েছে। এটা দুর্নীতি। কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার নোয়াখালী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. একরামুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে এলাকাবাসী উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি নাকচ করে দিয়ে দুষছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তারা বলছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা না থাকায় নিম্নমানের কাজ হয়। এটা রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।