নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৯টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ এবং বাতিলকৃত ভোট গণনার দাবি জানিয়েছেন নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী এ.এইচ.এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। একই সঙ্গে নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে তার দোয়াত কলম প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাটের প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
রোববার (১২ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনে ফলাফল কারচুপির অভিযোগ তোলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এই সময় সাংবাদিকদের সামনে বড় পর্দায় নির্বাচনে ভোট কারচুপি, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী এ.এইচ.এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্যাহ খান সোহেল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট ওমর ফারুকসহ হামলা ও ভাঙচুরের শিকার দোয়াত কলম প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে এ.এইচ.এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম অভিযোগ করে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী দলের নির্দেশনা অমান্য করে ছেলেকে জেতানোর জন্য ভোটারদের মাঝে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁর ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন বন্ধের ঘোষণাও দেন একরামুল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে সাংসদ একরামুলের স্ত্রী করিবহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলিও নির্বাচনের আগে তার ছেলের পক্ষে কাজ না করায় এমপির ডিও লেটার না দেওয়ার হুমকি দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম আরও বলেন, ভোটের শুরু থেকে একরামুল করিম চৌধুরী সুবর্ণচরে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে আমার দোয়াত কলম প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়ে ভোটারদের মাঝে ভয়ভীতি তৈরী করে। ভোটের আগের দিন রাতে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন প্রকাশ্যে কালো টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেন।
লিখিত অভিযোগে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ভোটের দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুবর্ণচরের চর মহিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, চর মহিউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর মহিউদ্দিন এন এ প্রো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ ৯টি কেন্দ্রে তাঁর কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাঁকে ভোট দিয়েছেন। সব ক’টি কেন্দ্রেই প্রথমে ভোট গণনায় তিনি বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু পরে তাঁর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে কারচুপির মাধ্যমে ৯টি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে পুরো উপজেলায় ১ হাজার ৯১৪ ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অযৌক্তিক। উল্লিখিত বাতিল ভোটের বিষয়ে কেন্দ্রে তার এজেন্টরা আপত্তি করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। এজেন্টদের তথ্য অনুযায়ী বাতিল হওয়া বেশির ভাগ ভোট তার প্রতীক দোয়াত-কলমের। বাতিল করা ভোট গণনার পাশাপাশি ৯টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান এ.এইচ.এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
এ সময় দোয়াত কলমের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, তাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের অব্যাহত চিত্র তুলে ধরে এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূল বিচার দাবি করেন খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
উল্লেখ্য, খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী আতাহার ইশরাক আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম দোয়াত-কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৪৫ ভোট।