ছবি: প্রতিনিধি
সাজ্জাদুল আলম শাওন, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) থেকে: শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো কৃষকের বিস্তৃত মাঠজুড়ে চোখে সরিষার দু-চোখ জুড়ানো হলুদ ফুলের সমারোহ। যেন চারিদিকে সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রুপ বৈচিত্র। যেন মাঠ জুড়ে হলুদ রঙে সাজিয়ে তুলিছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের দৃশ্য রূপ। মেয়ের বালিকারা মেতে উঠে আনন্দে হলুদ ফুলের রূপে। নিত্য নতুন ছন্দে, মনের আনন্দে দিন কাটে বালিকাদের। প্রতিদিন রাত শেষে ভোর হয় নতুন এক বার্তা নিয়ে। সকালে শিশির ভেজা কুয়াশার চাদরে গ্রামের মেঠো পথের দু’ধারে সরিষা ফুলের দৃশ্য সকলের মন কাড়ে।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত ফসলি জমিতে ভরে উঠেছে সরিষা ফুলের দৃশ্যপট। দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ফসলের মাঠে হাজারো মানুষ তাকিয়ে থাকে। গ্রামের বালিকা হলুদ ফুলের সাথে নিজের পোষক মিলিয়ে পরতে আনন্দ অনুভব করে। সরিষার মাঠজুড়ে এক দিকে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মধু সংগ্রহে করছে। অন্য দিকে প্রজাপতির দল এক ফুল থেকে আরেক ফুলে যাচ্ছে। এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন এক মনোমুগ্ধকর মুহুর্ত। বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কৃষকের মূখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা একই জমিতে সরিষা চাষ করেছে। সরিষার ফলন ঘরে তোলার সঙ্গেই আবারও একই জমিতেই কৃষকরা বোরো চাষ করবেন। সরিষা বিক্রি করে কৃষকেরা বোরো আবাদের জন্য স্বল্প খরচ ও কম পরিশ্রমেই সরিষার জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ অঞ্চলে। সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় ভালো দামের আশায়ও করছেন কৃষকরা।
উপজেলার কৃষক শামসুল আলম, হারু শেখ ও নুরুজ্জামান জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করেছি। গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে ফুল ধরায় আশানুরুপ ফলন হবে বলে মনে করছেন তিনি। এ বছর ভাল ফলন দেখায় আশা বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন করে সরিষা ঘরে তুলবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক। বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, সরিষার জমিতেই বোরো আবাদ ভাল হয় এবং খরচও কিছুটা কম। এছাড়াও বোরো আবাদের যে টাকা খরচ হয় তা সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে মেটানো সম্ভব হয় বলে আমন ধান ঘুরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ঐ জমিতে তারা সরিষার চাষাবাদ করেন।
সরিষা ফুলের সাথে তুলতে আসে দর্শনার্থী লামিয়া চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর এই সময়টা সরিষা ফুলে সারা মাঠ ভরে ওঠে। প্রতিটি মাঠ সবুজের এর পরিবর্তে হলুদে ভরে ওঠে। এ দৃশ্য দেখে আমার মত সকলেই মুগ্ধ হয়ে যায়। তাইতো ফুলের সাথে মিলিয়ে পোশাক পরে ছবি তুলতে এসেছি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এ বছর উপজেলার পৌরসভাসহ ৮ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন চরাঞ্চলে মোট ১ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষিরা সরিষার চাষবাদ করেছে। সরিষা আবাদের জন্য ১ হাজার ১শ ৮০ জন কৃষককে প্রর্ণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের মাঠে মাঠে গিয়ে সর্বাত্বক সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি কৃষকরা সরিষা চাষে লাভবান হবেন।