ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্স ভ্যাট দেয়না, অ্যামাজন, জি-৫

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডেস্ক::

দেশে অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স। এছাড়া রয়েছে অ্যামাজন প্রাইম, ভারতীয় জি-৫ সিরিজের কয়েকটি চ্যানেল, হইচই, টিকটক ইত্যাদি। সকল ধরনের বিনোদন পেতে গ্রাহকরা বিদেশে এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করে থাকে। তবে নির্ধারিত সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে এসব চ্যানেল দেখতে হয়। এতে কোন প্রকার ভ্যাট ছাড়াই বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের বাইরে চলে যায়।

তবে এখন থেকে এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করতে হলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডে সাবস্ক্রিপশন ফি জমা দিলে ব্যাংক সেখান থেকে ভ্যাট কর্তন করা হবে। এ ভ্যাট কর্তন করতে সম্প্রতি সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সব ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ‘নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জি-৫ ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশনের বিপরীতে পরিশোধযোগ্য ভ্যাট কর্তন’ করতে ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের। অধিপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আহমেদ জামাল বরাবর চিঠি দেন।

অপরদিকে, অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় সার্ভিসের মাসিক বিল পরিশোধের উপর ভ্যাট কর্তন বিষয়ে জানাতে এনবিআর থেকে সব ভ্যাট কমিশনারেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১০ মে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন সই করা চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অনলাইন সার্ভিস বেশ কিছু সময় ধরে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে এ সার্ভিসগুলোর লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত সেবা মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী একটি ভ্যাট আরোপযোগ্য সেবা। সাধারণত সাবস্ক্রাইবাররা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে এ ধরনের সেবার মূল্য বা ফি প্রদান করেন। যে সকল সাবস্ক্রাইবার স্থানীয় ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করেন, সে সকল ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ফি এর অর্থ নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য সেবা প্রদানকারীকে পরিশোধের পূর্বে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে তা যথাযথ অর্থনৈতিক কোডে জমা প্রদান করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যাংক এ আইনি বাধ্যবাধ্যকতা প্রতিপালন করছে কিনা তা জানা প্রয়োজন। অতএব, আপনার  কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ জাতীয় ফি পরিশোধের পূর্বে উৎসে ভ্যাট কর্তৃক করে কিনা এবং করে থাকলে অদ্যাবধি ব্যাংক কত টাকা ভ্যাট কর্তনপূর্বক জমা প্রদান করেছে বছরওয়ারী তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে সংগ্রহপূর্বক মধ্যে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, প্রিপেইড কার্ড দ্বারা যে অর্থ পরিশোধ হয় সেই টাকার থেকে ভ্যাট কিভাবে পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়েও ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়।’

মূসক গোয়েন্দার চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জি-৫ ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলের বিপরীতে বাংলাদেশ হতে বৈদেশিক মুদ্রায় সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এ সকল সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধ করা হচ্ছে। এ সকল অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেল মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর বিধানমতে সেবা কোড এস০৯৯.২০ এর আওতায় মূসক আরোপযোগ্য সেবা।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘দেখা যাচ্ছে যে, এ সকল সাবস্ক্রিপশন ফি’র বিপরীতে এনবিআর কোন মূসক পাচ্ছে না। এ সেবাটির মূল্য পরিশোধ কার‌্যক্রমটি যেহেতু মূলত ক্রেডিট কার্ড নির্ভর। তাই সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিশোধিত মূল্যের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রাহকদের নিকট হতে আদায়পূর্বক ট্রেজারিতে পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে তারা কোন কার‌্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না মর্মে জানা যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে মূসক আদায় করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো।’

এনবিআর সদস্য মো. জামাল  বলেন, ‘নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অনলাইন সার্ভিসের সাইস্ক্রাইবার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ থেকে গ্রাহকদের থেকে বিল নেওয়া হয়। এ সেবা থেকে ভ্যাট কর্তন হচ্ছে কিনা তা জানাতে কমিশনারেটগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্তন নিশ্চিত করতে সব ব্যাংকের আলোচনা করতে বলা হয়েছে।’

মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান  বলেন, ‘নিয়ম থাকলে ভ্যাট কর্তন করা হয় না। ফলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিষয়টি জানানো শুরু করেছে। আশা করি ভালো রেসপন্স পাবো।’

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর বিলের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কোন নির্দেশনা না দেওয়ায় তা আদায় হতো না। ভ্যাট গোয়েন্দার চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে ভ্যাট কর্তন করতে নির্দেশে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এ সেবা গ্রহণকারী এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে বিল পরিশোধকারী গ্রাহকদের চিঠি ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি জানিয়েছে। ফলে এখন থেকে গ্রাহককে ভ্যাট দিতেই হবে। নেটফ্লিক্সের সর্বনিম্ন গ্রাহক ফি মাসে ৮ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮০ টাকা (৮৫ টাকা ডলার ধরে)। এর ওপর ভ্যাট দিতে হবে ১০২ টাকা।

বেসরকারি ব্যাংক সূত্র জানায়, বিনোদনমূলক এসব বিদেশি চ্যানেলের তালিকা করা হয়েছে। যেসব সেবার বিপরীতে ভ্যাট কাটা হবে। এর মধ্যে জনপ্রিয় সেবার মধ্যে রয়েছে-নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই, টিকটক, গুগলমিট, জুম, স্কাইপি, স্ল্যাক ইত্যাদি। মূলত অনলাইনে অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের যেকোনো সেবার ক্ষেত্রেই ভ্যাট দিতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে বিদেশি পত্রিকাও।

অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি এনবিআর ভৌগোলিক সীমানার বাইরে থেকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, কোনো ব্যাংক এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় করছে না বলে তাদের জানানো হয়েছে। চিঠিতে রয়্যালটি, বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ চিঠিটি সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সে প্রতিবেদনে গুগল-ফেসবুকসহ চারটি ইন্টারনেট জায়ান্ট পাঁচবছরে আয় করেছে প্রায় দুই কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর থেকে ভ্যাট পেয়েছে ৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ ভ্যাট আদায় করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, নেটফ্লিক্স ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে দুই লাখের বেশি মানুষ নেটফ্লিক্স ব্যবহার করে। যাদের কাছ থেকে মাসে গড়ে অন্তত ১০ ডলার করে চার্জ করছে নেটফ্লিক্স। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সিনেমা, নাটক ও সিরিজ দেখিয়ে কার্ড থেকে অনলাইনেই চার্জ নেওয়া হয়। বেশিরভাগ গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করে। এ হিসেবে কোন প্রকার ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ ছাড়াই প্রতিবছর দেশ থেকে অবৈধভাবে দুইশ কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অ্যামাজন প্রাইম, ভারতীয় জি-৫ সিরিজের কয়েকটি চ্যানেলসহ আরো কয়েকটি অনলাইন বিনোদনমূলক চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কোন প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করা হয় না। এখন থেকে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলে ভ্যাট কর্তন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্স ভ্যাট দেয়না, অ্যামাজন, জি-৫

আপডেট সময় : ১১:৫৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০

ডেস্ক::

দেশে অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স। এছাড়া রয়েছে অ্যামাজন প্রাইম, ভারতীয় জি-৫ সিরিজের কয়েকটি চ্যানেল, হইচই, টিকটক ইত্যাদি। সকল ধরনের বিনোদন পেতে গ্রাহকরা বিদেশে এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করে থাকে। তবে নির্ধারিত সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে এসব চ্যানেল দেখতে হয়। এতে কোন প্রকার ভ্যাট ছাড়াই বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের বাইরে চলে যায়।

তবে এখন থেকে এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করতে হলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডে সাবস্ক্রিপশন ফি জমা দিলে ব্যাংক সেখান থেকে ভ্যাট কর্তন করা হবে। এ ভ্যাট কর্তন করতে সম্প্রতি সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সব ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ‘নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জি-৫ ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশনের বিপরীতে পরিশোধযোগ্য ভ্যাট কর্তন’ করতে ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের। অধিপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আহমেদ জামাল বরাবর চিঠি দেন।

অপরদিকে, অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় সার্ভিসের মাসিক বিল পরিশোধের উপর ভ্যাট কর্তন বিষয়ে জানাতে এনবিআর থেকে সব ভ্যাট কমিশনারেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১০ মে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন সই করা চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অনলাইন সার্ভিস বেশ কিছু সময় ধরে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে এ সার্ভিসগুলোর লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত সেবা মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী একটি ভ্যাট আরোপযোগ্য সেবা। সাধারণত সাবস্ক্রাইবাররা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে এ ধরনের সেবার মূল্য বা ফি প্রদান করেন। যে সকল সাবস্ক্রাইবার স্থানীয় ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করেন, সে সকল ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ফি এর অর্থ নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য সেবা প্রদানকারীকে পরিশোধের পূর্বে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে তা যথাযথ অর্থনৈতিক কোডে জমা প্রদান করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যাংক এ আইনি বাধ্যবাধ্যকতা প্রতিপালন করছে কিনা তা জানা প্রয়োজন। অতএব, আপনার  কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ জাতীয় ফি পরিশোধের পূর্বে উৎসে ভ্যাট কর্তৃক করে কিনা এবং করে থাকলে অদ্যাবধি ব্যাংক কত টাকা ভ্যাট কর্তনপূর্বক জমা প্রদান করেছে বছরওয়ারী তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে সংগ্রহপূর্বক মধ্যে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, প্রিপেইড কার্ড দ্বারা যে অর্থ পরিশোধ হয় সেই টাকার থেকে ভ্যাট কিভাবে পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়েও ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়।’

মূসক গোয়েন্দার চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জি-৫ ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলের বিপরীতে বাংলাদেশ হতে বৈদেশিক মুদ্রায় সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এ সকল সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধ করা হচ্ছে। এ সকল অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেল মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর বিধানমতে সেবা কোড এস০৯৯.২০ এর আওতায় মূসক আরোপযোগ্য সেবা।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘দেখা যাচ্ছে যে, এ সকল সাবস্ক্রিপশন ফি’র বিপরীতে এনবিআর কোন মূসক পাচ্ছে না। এ সেবাটির মূল্য পরিশোধ কার‌্যক্রমটি যেহেতু মূলত ক্রেডিট কার্ড নির্ভর। তাই সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিশোধিত মূল্যের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রাহকদের নিকট হতে আদায়পূর্বক ট্রেজারিতে পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে তারা কোন কার‌্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না মর্মে জানা যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে মূসক আদায় করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো।’

এনবিআর সদস্য মো. জামাল  বলেন, ‘নেটফ্লিক্স ও এ জাতীয় অনলাইন সার্ভিসের সাইস্ক্রাইবার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ থেকে গ্রাহকদের থেকে বিল নেওয়া হয়। এ সেবা থেকে ভ্যাট কর্তন হচ্ছে কিনা তা জানাতে কমিশনারেটগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্তন নিশ্চিত করতে সব ব্যাংকের আলোচনা করতে বলা হয়েছে।’

মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান  বলেন, ‘নিয়ম থাকলে ভ্যাট কর্তন করা হয় না। ফলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিষয়টি জানানো শুরু করেছে। আশা করি ভালো রেসপন্স পাবো।’

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর বিলের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কোন নির্দেশনা না দেওয়ায় তা আদায় হতো না। ভ্যাট গোয়েন্দার চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে ভ্যাট কর্তন করতে নির্দেশে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এ সেবা গ্রহণকারী এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে বিল পরিশোধকারী গ্রাহকদের চিঠি ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি জানিয়েছে। ফলে এখন থেকে গ্রাহককে ভ্যাট দিতেই হবে। নেটফ্লিক্সের সর্বনিম্ন গ্রাহক ফি মাসে ৮ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮০ টাকা (৮৫ টাকা ডলার ধরে)। এর ওপর ভ্যাট দিতে হবে ১০২ টাকা।

বেসরকারি ব্যাংক সূত্র জানায়, বিনোদনমূলক এসব বিদেশি চ্যানেলের তালিকা করা হয়েছে। যেসব সেবার বিপরীতে ভ্যাট কাটা হবে। এর মধ্যে জনপ্রিয় সেবার মধ্যে রয়েছে-নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই, টিকটক, গুগলমিট, জুম, স্কাইপি, স্ল্যাক ইত্যাদি। মূলত অনলাইনে অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের যেকোনো সেবার ক্ষেত্রেই ভ্যাট দিতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে বিদেশি পত্রিকাও।

অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি এনবিআর ভৌগোলিক সীমানার বাইরে থেকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, কোনো ব্যাংক এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় করছে না বলে তাদের জানানো হয়েছে। চিঠিতে রয়্যালটি, বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ চিঠিটি সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সে প্রতিবেদনে গুগল-ফেসবুকসহ চারটি ইন্টারনেট জায়ান্ট পাঁচবছরে আয় করেছে প্রায় দুই কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর থেকে ভ্যাট পেয়েছে ৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ ভ্যাট আদায় করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, নেটফ্লিক্স ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে দুই লাখের বেশি মানুষ নেটফ্লিক্স ব্যবহার করে। যাদের কাছ থেকে মাসে গড়ে অন্তত ১০ ডলার করে চার্জ করছে নেটফ্লিক্স। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সিনেমা, নাটক ও সিরিজ দেখিয়ে কার্ড থেকে অনলাইনেই চার্জ নেওয়া হয়। বেশিরভাগ গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করে। এ হিসেবে কোন প্রকার ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ ছাড়াই প্রতিবছর দেশ থেকে অবৈধভাবে দুইশ কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অ্যামাজন প্রাইম, ভারতীয় জি-৫ সিরিজের কয়েকটি চ্যানেলসহ আরো কয়েকটি অনলাইন বিনোদনমূলক চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কোন প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করা হয় না। এখন থেকে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলে ভ্যাট কর্তন করা হবে।